সাধারন মুসলিম:-আসলেই তো! (প্রথম প্রশ্ন)
দুনিয়াতে মানুষ ৬০-৭০ বছর বাঁচে। তার এই ছোট্ট সময়ের অপরাধগুলোর জন্য কেনো অনন্তকাল জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে?
সাধারণ মুসলিম:-আরেহ্, এভাবে তো ভেবে দেখিনি! (দ্বিতীয় প্রশ্ন)
আমি, আমার এক বাচাল বন্ধু সাথে এক নাস্তিক। ভার্সিটির এক বাগানের পাশে বসে আছি। বাচাল বন্ধু আমার নবীজীর বিভিন্ন বিষ্ময়কর মোজিজা নিয়ে অনর্গল আলোচনা করছে। নাস্তিক দাদা শুনছেন আর মুচকি হাসছেন। কথার মাঝে তিনি বলে উঠলেন, "আচ্ছা, আপনাদের আল্লাহ্ আসমান জমিন হও বললেই এক সেকেন্ডে সবকিছু সৃষ্টি করে দিতে পারতেন। ৬ দিন অপেক্ষা করার কি দরকার ছিলো?" আমিও হালকা হেসে দিলাম তার প্রশ্ন শুনে! তারপর নাস্তিক ভাইকে বললাম,
আমি: আচ্ছা, আপনি কখনো ডিম ভাজি করছেন?
নাস্তিক: মানে?
আমি: না মানে, ডিম তো একেবারেই ভেঙে তেলে ছেড়ে দিতে পারতেন! বার বার গুতা দিয়ে আস্তে আস্তে ডিম ভাঙার দরকার কি?
নাস্তিক: কারণ যাতে ডিম ভেঙে বাহিরে পড়ে না যায়, ডিমের খোসার অংশ যেনো গরম তেলে না পড়ে। সেজন্য কয়েকবার আঘাত করে আস্তে করে ডিম ভেঙে কড়াইয়ে ভাজি বানাবো!
আমি: আল্লাহ্ কি এভাবে তার সৃষ্টিকে সযত্নে বানাতে পারে না?
নাস্তিক: ধুর, ভাই কিসের মধ্যে কি আনলেন?
আমি: আচ্ছা, বাদ দিন। আপনার বেষ্ট ফ্রেন্ড আছে?
নাস্তিক: হ্যাঁ, আছে অবশ্যই।
আমি: তার সাথে কতদিনের সম্পর্ক?
নাস্তিক: সেই হাই স্কুল থেকেই।
আমি: সম্পর্ক দিন দিন মজবুত হচ্ছে নাকি দুর্বল?
নাস্তিক: না তো, ওর সাথে আমার কঠিন ভালোবাসা, বন্ধুত্ব।
আমি: এই কঠিন বন্ধুত্ব এক দিনে গড়েছেন নাকি বছরের পর বছর সময় নিয়ে?
নাস্তিক: তা কখনো হয়? সময়ের সাথে সাথে মানুষের বন্ধুত্ব ভারি হয়!
আমি: আমার রবও তেমন সময় নিয়ে আমার জন্য এই মহাবিশ্ব নিপুণভাবে সাজিয়েছেন।
নাস্তিক: হা হা হা। তার মানে আল্লাহ্ সময়ের মুখাপেক্ষী!
আমি: আমার স্রষ্টা হও বা কুন শব্দেরও মুখাপেক্ষী নন।
নাস্তিক: তাহলে? ছয় দিন লাগলো কেনো?
আমি: আচ্ছা, ধরুণ আপনি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী হলেন! আপনি বিবাহ করলেন, আল্লাহ্-এর কাছে আপনি একটি নেককার সন্তান চাইলেন! আল্লাহ্ আপনার দোয়া কবুল করলেন। আপনার সন্তানকে কুন বা হও বলে আপনার স্ত্রীর গর্ভপাত করিয়ে তখনি পাঠিয়ে দিবেন নাকি স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তানকে ১০ মাস ১০ দিন গর্ভধারণ করে তারপর আপনার নেককার সন্তানের চেহেরা দেখাবেন? আমার আল্লাহ্ সর্বদা যৌক্তিক ও সুগঠিত পথটিই বেছে নেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ হেকমতওয়ালা।
[নাস্তিক ভাই তখন চুপ। রেগে যাচ্ছে বোধহয়]
তফসীরবিদ সাঈদ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্ তায়ালার মহাশক্তি নিঃসন্দেহে এক নিমিষেই সবকিছু সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু মানুষকে বিশ্বব্যবস্থা পরিচালনার ধারাবাহিকতা ও কর্মপক্কতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ছয়দিন ব্যয় করা হয়েছে। যেমন রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, চিন্তাভাবনা, ধীরস্থিরতা ও ধারাবাহিলতার সাথে কাজ করা আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে, আর তড়িঘড়ি কাজ করা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। (মারেফুল কোরআন)
আরেকটি কথা হলো কোন সৃষ্টিই তার স্রষ্টার উপর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। আপনি নিশ্চই যানেন সময়ও একটি সৃষ্টি যা বিগ ব্যং এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে। তো আমার বিশ্বাস আল্লাহ্ যখন ইচ্ছে তখন সময়কে দ্রুত বা ধীর করে দিয়ে কুন বা হও বা এক সেকেন্ডে করে দিতে পারেন।
নাস্তিক: ওসব বুঝিনা। আর মহাবিশ্বের বয়স সাড়ে ১৩শ' কোটি বছর। আর আপনার কোথায় কি বিশ্বাস করেন, ৬ দিন। হা হা হা, হাস্যকর!
আমি: আচ্ছা, পৃথিবীর বয়স কত?
নাস্তিক: সাড়ে চারশ' কোটি বছর!
আমি: এই পৃথিবী বয়স ৪শ' ৫০ কোটি বছর। মহাবিশ্বের বয়স ১৩শ' ৫০ কোটি বছর। আমরা তাহলে বুঝলাম, পৃথিবীর চেয়ে মহাবিশ্ব ৯শ' কোটি বছর বেশি পুরানো। কারণ ১৩শ' ৫০ থেকে ৪শ' ৫০ বাদ দিলে ৯শ' কোটি বছর থাকে। ৯শ' কোটি বছরকে ২ ভাগ করলে দুটি ৪শ' ৫০ কোটি বছর হয়। তার মানে আমাদের পৃথিবীর বয়স মহাবিশ্বের ৩ ভাগের ১ ভাগ। অর্থাৎ ৯শ' কোটি বছর পর আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে।
নাস্তিক: হে তো কি হইছে?
আমি: কোরআন মাজিদে কি লিখা? এই মহাবিশ্ব ছয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে ছয় দিনের শেষের দুই দিনে। তার মানে প্রথম ৪দিন পৃথিবী ছিলো না।তার মানে ৪.৫ * ২ = ৯ কোটি বছর পৃথিবী ছিলো না। পরের ২ দিনে অর্থাৎ শেষ ৪৫০ কোটি বছরে পৃথিবী এসেছে। এভাবেই আল্লাহ্ কোরআন শরীফে মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবীর বয়স কয়ভাগ তা বলে দিয়েছেন।
নাস্তিক: বুঝলাম, তবে ৬ দিন কিসের। এটা কেমন দিন যেখানে বিজ্ঞানীরা বলে শত কোটি বছর বয়স আমাদের মহাবিশ্বের বয়স!
আমি: পবিত্র কোরআনের ৬ দিন সম্পর্কিত যত আয়াত আছে সেখানে আইয়াম শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যার একটি অর্থ অতিশয় বিশাল দীর্ঘ দিন। এই শব্দটির অর্থ আরো স্পষ্ট করে বলি, যেমন ধরুন আপনি বললেন বহুদিন ধরে আমি মাছ খাই না। এখানে সর্বোচ্চ কয়েক মাস বুঝাবে, তারপর আবার বললেন, বহুদিন ধরে আমি দেশের বাড়িতে যাই না। এখানে ৫-১০ বছর পর্যন্ত বুঝাবে। শব্দের অর্থ ও ব্যবহার ঘটনাক্রমে আলাদা আলাদা বুঝায়।
ঠিক আছে বুঝলাম, আমার আরও একটি গভীর প্রশ্ন আছে।
নাস্তিক: "আচ্ছা, দুনিয়াতে মানুষ আনুমানিক ৭০-৮০ বছর বাঁচে। এই ছোট্ট জীবনের জন্য তোমাদের আল্লাহ্ কেনো অনন্ত কাল জাহান্নামের আগুণে পাপীদের পুড়াবে? যা পাপ করেছি তার শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিলেই তো হয়, ন্যায়বিচারের মতো! এটা ঠিক না, এটা স্রষ্টার সংবিধান হতে পারে না"
আমি: আচ্ছা, ধর্ষক ধর্ষণ করে কতক্ষণ মজা পায়?
নাস্তিক: কেনো? বেশি হলে আধ ঘন্টা, এক ঘন্টা!
আমি: ধরা পড়লে কি করা হয়? যাবৎ জীবন কারাদণ্ড, কোনো কোনো দেশে ৫০-৬০ বছর কারাদণ্ড, তাছাড়া অধিকাংশ দেশে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যাহ্, এটা কি হলো! বেচারা আধ, ঘন্টা এক ঘন্টা আরামের জন্য জুয়ান কালেই অক্কা পেয়ে গেলো। এটা কি ঠিক করলো সরকার ও সংবিধান?
নাস্তিক: অবশ্যই ঠিক করছে, তাকে তো জ্যান্ত করে আরো বার বার হত্যা করা উচিত।
আমি: তাহলে আমার আপনার সৃষ্টিকর্তা যিনি প্রতিটা মুহূর্ত আপনাকে অক্সিজেন সরবরাহ করছেন, তিন বেলা খাওয়াচ্ছেন, অফুরন্ত নিয়ামতের সাগরে ভাসিয়ে রাখছেন। তাকেই বিশ্বাস না করলে তিনি কেমন শাস্তি দিবে? আচ্ছা ধরেন, আপনি আপনার এক ভাইকে একটি কিডনি দিয়ে জীবন বাঁচালেন, সুস্থ হওয়ার পর অকল্পনীয় ভাবে সে আপনাকে অস্বীকার করলো'! আপনি কি করবেন?
নাস্তিক: একটা মাইরও মাটিতে পড়বে না, ওর নামে মামলা করবো!
আমি: তাহলে ভেবে দেখুন, সে আপনার শরীরের প্রতিটা পরমাণু সৃষ্টি করতে তাকে আপনি অস্বীকার, অবিশ্বাস করলে তিনি কতটা রেগে যাবেন?



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন