❒ টানা তিন মাস মেহনতের পর থিসিস টা অবশেষে কমপ্লিট হলো, কাগজপত্র সব এক সূত্রে গেথে স্যারের কাছে জমা দিয়ে এলাম। উফফ, কি আনন্দ! ভার্সিটির ক্যান্টিনে-এ উপলক্ষে বন্ধুদের সবাইকে বিরিয়ানি ট্রিট দিলাম, অনেক সাপোর্ট করেছে ওরা! বহু আড্ডা-মাস্তির পর বাসায় দিকে রওনা দিলাম। বাসে উঠে, দেখি এক কোণে একটা সিট খালি! আমি তো দৌড়িয়ে সিট দখল করতে ইতস্তত হয়ে গেলাম। আরে, একি!
ණ মনোবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর মুখ গোমরা করে বসে আছে। হালকা কুশল বিনিময় করে পাশে বসবার অনুমতি চাইলাম, হ্যাঁ বোধক সম্মতি দিলেন স্যার। শুনেছি স্যার নাকি ভার্সিটিতে অগ্রগামী একজন নাস্তিক হিসেবে পরিচিত।
ණ যাই হোক, বাস মৃদু গতিতে সামনের দিকে ধাবমান। ৫ মিনিট হলো, ১০ মিনিট গেলো, এরপর ১৫ মিনিটের মাথায় বাস জেমে আটকে গেলো। এদিকে, স্যারের সাথে কোনো কথা নেই, চুপচাপ গোমড়া মুখ করে বাহিরের প্রকৃতির দিকে দৃষ্টিচারণ করছে। আমারও ভালো লাগতেছিলো না, ওদিকে স্মার্টফোনে ভুঁড়ি ভুঁড়ি এমবি ছিলো। আনমনে ইউটিউবে মিজানুর রহমান আজহারি সার্চ করে ওনার ওয়াজ শুনতে লাগলাম। কেনো জানি সব সময়-ই আজহারী সাহেবের ওয়াজ শুনতে ভালোলাগে। হিদায়েতের গল্প বলছেন আজ, হিদায়েতের মালিক আল্লাহ্, আল্লাহ চাইলে সবাইকে হিদায়েত দিতে পারেন, আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো মাখলুকের মানুষকে হিদায়েত দেওয়ার ক্ষমতাও নেই, সাথে কিছু জবরদস্ত, ইমান ঠান্ডা করা গল্প।
✿ এসব কথা শুনে স্যারের যেনো টনক নড়লো, চশমাটা বের করে চক্ষু নিচু করে আজহারী সাহেবের কথাগুলো শুনতে লাগলেন স্যার। আমার কাছে প্রতিটি কথা শ্রুতিমধুর লাগলেও স্যারকে দেখে মনে হচ্ছে কথাগুলো নিখুঁত তদন্তের বিষয়, পথিমধ্যে স্যার আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, হিদায়েতের মালিক তো একমাত্র আল্লাহ্?
আমি বললাম, "হুম, স্যার!"
স্যার: তাহলে আল্লাহ্ কেনো সবাইকে হিদায়েত দেয় নাহ? মানে আল্লাহ্ যখন যে কাউকে হিদায়েত দিতে পারেন তাহলে তিনি দেন না কেনো সবাইকে হিদায়েত? আল্লাহ্ যদি একটি মানুষকে হিদায়েত না দেন তাহলে সে মানুষের কিই বা করার আছে বলো শুনি? এই যে কত্ত শত অমুসলিম, নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেসী আশেপাশে। সবাইকে হিদায়েত দিলেই এই সুজলা সুফলা বসুন্ধরার সব গেঞ্জাম মিটমাট হয়ে যায়। তখন সবাই মুসলিম হতো, হতো একটি ধর্ম একটি সংবিধান। থাকতোনা কোনো ধর্ম কেন্দ্রিক বৈষম্য, নিজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্ম নিয়ে তর্কাকর্তি, মারামারি। আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার পেতাম, আল্লাহও আরশে তার বান্দাদের বিচরণ আরামচে দেখতে পারতেন!
❀ কিন্তু এসব তো হলো না! এখানে যুক্তি আর বিশ্বাসটা কোথায়? আমিতো হারিকেন দিয়েও এর উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না।
আমি: বেয়াদবি নিবেন না স্যার, আপনার পরিকল্পনা, চিন্তাধারা সুন্দর হলেও, আসলে এটি বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্য আপনার মতো মানুষ-ই দায়ী।
স্যার: মানে কি? আমার ঢিল আমাকেই ছুড়ে মারছো?
আমি: রাগ করবেন না স্যার, পরে বুঝাচ্ছি। একটু সাধারণ ভাবে ভেবে দেখেন স্যার, পৃথিবীতে সবাইকে আল্লাহ হেদায়েত দিলেন, সবাই মুসলিম হলো, অতঃপর সবাই জান্নাতে গেলো। তখন জাহান্নাম কি করবে? আল্লাহর কাছে জাহান্নাম নির্জন, একাকী অবস্থায় তাকে সৃষ্টি করবার কারণ জানতে চাইবে, তখন কি জবাব দিবেন আল্লাহ?
স্যার: আরে, জাহান্নাম সৃষ্টি করার দরকার ই বা ছিলো কি? সবাই কে যখন জান্নাতে দেওয়া হবে তাহলে শুধু জান্নাত ই সৃষ্টি করে রাখাতো।
আমি: আপনি কি বলছেন, ভেবে বলতেছেন কি?
স্যার: হ্যাঁ, ভেবেই তো বলছি।
আমি: আল্লাহ সবাইকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠালো, পৃথিবীতে কোনো খারাপ মানুষ, খারাপি কাজকর্ম, দুর্নীতি দু্র্ঘটনা নেই, সকল মানুষ হেদায়েতপ্রাপ্ত ফেরেশতা অনুরূপ মানুষ। সারাজীবন পৃথিবীর সকল মানুষের সাথে ভালো খেয়ে, ভালো পরে, সুখে স্বানন্দে জীবন কাটিয়ে মারা গিয়ে আবার চিরসুখের জান্নাতে প্রবেশ করলো। না মানে কতটা শিশুসুলভ চাওয়া আপনার!
না মানে, একজন চাকুরিজীবীকে আরামভরা কাজকর্ম করতে দেওয়া হলো এবং কোনো ধরণের কষ্টসাধ্য জটিলতা ও বু্দ্ধি দীপ্ত পরীক্ষা ছাড়াই তাকে প্রমশন দিয়ে স্বর্গীয় পেমেন্ট দেওয়া হলো। হা হা! এধরণের কারবার পৃথিবীতে তো কোথাও হয় ই না, আবার আপনি সৃষ্টিকর্তার থেকে এমনা আশা করছেন। অন্যদিকে, এটা কোন ধরণের পরীক্ষা হবে সেখানে সবাই আগে থেকেই জানবে আমি জান্নাতী? হ্যাঁ? এটা কোন ধরণের পরীক্ষা হবে যেখানে সবাই আগে থেকেই জানবে ফেল্টু জাহান্নামী নেই?
স্যার: ওহ হো! আমিতো এতদিন এভাবে ভাবিই নি।
আমি: যাগ্গে, আসল কথা হলো, স্যার, ভালোকে টেস্ট করার জন্য অনেক সময় খারাপকে প্রয়োজন হয়। পৃথিবীর সবাই মুসলিম হলে, কখনো কোনো ইমানদার ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম হিসেবে সৌভাগ্যবান মনে করতো না। পৃথিবীতে সবাই হেদায়েতপ্রাপ্ত ভালো মানুষ হলে, ভালো মানুষদের কোনো মূল্যায়ন ই থাকতো না, কারণ সবাই ই ভালো। কোনো জিনিস সহজলভ্য হয়ে গেলে তার মূল্যায়ন থাকে না কারো কাছে! সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে তাহলে কিভাবে মূল্যায়ন পাবেন? এর আশা কিভাবে করেন আপনি? ভালো আছে বলেই খারাপের বদনাম, খারাপ আছে বলেই ভালোর সুনাম। ভালো খারাপ একে অপরের পরিপূরক। বুঝলেন কি স্যার?
❀ চশমা নারিয়ে হালকা ভাবছেন, আর বললেন, "হ্যাঁ বুঝলাম, যদিও তোমার দৃষ্টিকোণ থেকে কখনো বুঝে দেখিনি!"
আমি: শুকরিয়া, এই সব কথা থাক, মূল আলোচনা করি, পারফেক্ট ইসলামিক ভিউ থেকে আপনার প্রশ্নের উত্তর কি হবে, সেটা বলি। আল্লাহ্ অমুসলিম, নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেসী এদের হেদায়েত দেন না কেনো? এদেরকে হিদায়েত দিলেই তো পৃথিবী চমৎকার হয়ে যায়, তাই না?
স্যার: হ্যাঁ!
আমি: আপনি তো জানেন মানুষকে আল্লাহ্ স্বাধীন জীবন দিয়েছেন, যাতে পরীক্ষা করতে পারে কে দুনিয়ার পরীক্ষা ক্ষেত্রে উত্তম। কে আল্লাহর সামনে কত ভালো ইমান এবং আমল নিয়ে অপারে দাড়াতে পারে!
স্যার: হ্যাঁ, এটা তোমাদের বিশ্বাস, তারপর...!
আমি: জীবনে তো বহু অমুসলিম, নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেসী আমি দেখেছি, আপনিও দেখেছেন। আজ পর্যন্ত এমন কোনো জেনুইন অমুসলিম, নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেসী দেখেছেন যে মুসলিম হতে চায়? মুসলিম হয়ে সারাদিন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রমজানের ত্রিশ রোজা, আর কোরবানিতে কষ্টের টাকা দিয়ে উট, গরু, মহিষ কুরবানি দিতে চায়? সে কি চায় সেকুলার, মুক্তমনা, মুক্তচিন্তার আরামভরা জীবন থেকে বেরিয়ে প্র্যাকটিকাল মুসলিম হতে?
স্যার: কেনো? তা হতে যাবে কেনো? হ্যাঁ?
আমি: আহা, আমার উত্তর দিন না আগে!
স্যার: না, তা দেখেনি বটে!
আমি: তারা নিজেরা হেদায়েত চায় না, তাহলে কেনো আল্লাহ্ তাদের উপর জোর করে হিদায়েত দিবেন? আপনি নিজেও হেদায়েত চান না, আপনাকে আল্লাহ্ জোর করে হিদায়েত দিবেন? অন্যদিকে আল্লাহ নিজেই বলছে, "যিনি (আল্লাহ্) জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে কাজ কর্মের দিক থেকে উত্তম।" অন্যদিকে আল্লাহ্ আবার বলছে, "দ্বীনের ক্ষেত্রে (ইসলাম ধর্ম গ্রহণ অথবা পালনের ক্ষেত্রে) কোনো জোর জবরদস্তি নেই।" একদিকে আল্লাহ বলছেন, দুনিয়া মানুষদের জন্য পরীক্ষা ক্ষেত্র, ধর্ম গ্রহণে, পালনে কোনো জোর জবরদস্তি নেই। আবার সেই আল্লাহ নাকি নিজেই অমুসলিম, নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেসীদের উপর জোর খাটিয়ে হেদায়েত দিবেন? আল্লাহ্ কে কি হিপোক্রেট পাইছেন নাকি যে এক জায়গায় এক কথা বলবে আরেক জায়গায় আরেক কাজ করবে? (67:2 & 2:256)
স্যার: ওহ আচ্ছা, তবে মাঝে মাঝে যে শুনি অমুসলিম, নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেসীর মাঝে কেউ কেউ মুসলিম হইছে। তাদেরকে তো তাহলে আল্লাহ্ হিদায়েত দিয়েছেন।
আমি: কেউ কেউ না, বহু বহু হচ্ছে! মুসলিমদের লাইফস্টাইল, সৌজন্যমূলক আচরণ, নবীজীর মহানুভবতা, নবীজীর প্রচলিত চারিত্রিক ঘটনা, কোরআনের ভাষাশৈলী, কোরআনের শত শত অগণিত বৈজ্ঞানিক মোজেজা ইত্যাদি সহ অগণিত জিনিস দেখে অগণিত বিধর্মী, অবিশ্বাসী ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এরপর আল্লাহ্ চাহেন তো তাকে হিদায়েতের পথিক বানান। "আল্লাহ্ যাকে হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার বুক উন্মুক্ত করে দেন।" রাস্তা দিয়ে এক ইসলামবিদ্বেসী হাটছে আর আকাশ থেকে ধপাস করে হিদায়েত মাথার উপর পড়লো, হিদায়েত বিষয়টা কখনই এমন নয়! (6:125)
❒ ইসলামে অন্যান্য ধর্মের চেয়ে এতটা রুচিপূর্ণ, মানসম্মত জীবনব্যবস্থা, বিশ্বাসভঙ্গী থাকাও পরও, শুনার পরও কি প্রত্যেকটা অমুসলিমদের মন গলে, ইমান আনে? না, কখনো না। ইসলাম চিন্তাশীল, বোধসম্পন্ন মানুষদের জন্য। এমন উদ্ধত মানুষদের জন্য না, যারা যেকোনো কিছু শোনার সাথে সাথে নাকোচ করে দেয় যা নাস্তুিকরা, অমুসলিমরা করে থাকে যখন তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়।
যখন প্রশ্ন করলেন, আল্লাহ সবাইকে তাহলে হিদায়েত দেন না কেনো! তখন মেজাজ খিটমিটে হয়ে গেছিলো, নিশ্চুপ না থাকলে বলতাম, আল্লাহর কি তার বান্দাদের সাথে কোনো ধরণের শত্রুতা, হিংসা আছে নাকি যে তাদের হিদায়েত দিবেন না? বরং মানুষ ই নিজেই নিজের বারোটা বাজায়।
◤নিশ্চই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি কোন জুলুম করেন না। বরং মানুষই নিজেদের প্রতি জুলুম করে থাকে। (সূরা ইউনুস, আয়াত ৪৪)◢
কষ্ট নিবেন না স্যার, একটা বাস্তব কথা বলি, আজ এখন যদি আমি আপনাকে ইসলামের পূর্ণ কনসেপ্ট নিয়ে দাওয়াত দিই আপনি আমার কোনো কথাই তোয়াক্কা করবেন না, কারণ আপনি ও আপনার মতো নাস্তিকরা ধর্মকে কেচ্ছাকাহিনীর ভান্ডার মনে হয়। সেজন্যই প্রথমে বলেছিলাম আপনার চিন্তাধারা বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্য আপনাদের মতো মানুষ-ই দ্বায়ী। (এসব শুনে স্যার ইতস্তত বোধ করছে)
আমি: প্রত্যেকটা মানুষকে আল্লাহ্ জন্মগতভাবে হিদায়েত দিয়েই পৃথিবীতে পাঠান! দাড়ান, এখন আপনাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাই যে প্রতিটি শিশুই স্রষ্টায় বিশ্বাসী হয়ে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়:
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জাস্টিন ব্যারেট একজন এনথ্রোপোলজিস্ট, বাংলায় নৃবেজ্ঞানী, যিনি মানব উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে গবেষণা করেন। দীর্ঘদিন ধরে সিনিয়র এবং অগ্রগামী একজন গবেষক হিসেবে তিনি পরিচিত। ওনার প্রতিষ্ঠিত একাডেমিক তথ্যসমগ্র দিনের আলোর মতো পরিষ্কার বলছে ইসলামের ধর্মের হাদিস সমগ্র ধ্রুবসত্য।
ණ গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়: সকল শিশু সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। এমনকি একটি শিশুর পরিবার কিংবা স্কুল যদি কখনো তাকে এক সৃষ্টিকর্তার শিক্ষায় দীক্ষিত নাও করে তবুও সে এক মহান বুদ্ধিমান সত্তায় বিশ্বাসী হয়ে বেড়ে উঠবে। শিশুরা এমন বিশ্বাস ধারণ করে যে, একজন হাইয়ার পাওয়ার, অতিপ্রাকৃত সত্তা আমাদের আশেপাশের সবকিছু বানিয়েছে, সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি একটি শিশুকে জন্মের পর জনমানবশূন্য কোনো দ্বীপে ফেলে রেখে আসি, এরপর সে যদি সেখানে বেড়ে উঠে, তবুও সে একজন সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস ধারণ করে বেড়ে উঠবে। চমকপ্রদ তথ্য এই যে, পৃথিবীতে বন জঙ্গলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাংস্কৃতিক ধর্ম আছে, যারা এক সৃষ্টিকর্তার ধারণা রাখে না, মূর্তিপূজাই, দেবী দেবতাই তাদের সব বিশ্বাস, এদের ঘরে জন্ম নেওয়া পরিণত শিশুরাও এক সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসী হয়ে থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের ধর্ম সংস্কৃতি দিয়ে আশেপাশের মানুষ ব্রেনওয়াস করে দেয়।
১৪৫০ বছর আগে মরুভূমিতে বসবাস করা সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ঠিক এই গবেষণা লব্ধ কথা অনেক আগে বলে গেছেন।
◤আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ "প্রত্যেক নবজাতক ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে, (ফিতরাত)। অতঃপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহূদী বা নাসারা অথবা অগ্নি উপাসক করে।" (সহিহ্ বুখারি, হাদিস নং: ১৩৫৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩০২)◢
প্রত্যেকটা মানুষকে আল্লাহ্ জন্মগতভাবে হিদায়েত দিয়েই পৃথিবীতে পাঠান! পরে পরিবার এবং সমাজের প্ররোচনায় এবং নিজের মান সন্মান, মর্যাদা টিকিয়ে রাখার জন্য নিজ পৃত্যপুরুষের ধর্ম পালন করে। অন্য ধর্মতত্ত্বে ভূক্ষেপও করে না।
আপনাকে কেনো 1400cc এর ব্রেন কেনো দেওয়া হইছে, যা দিয়ে আপনি পৃথিবীর অন্য যেকোনো প্রাণীর থেকে অতুলনীয় বুদ্ধিমান চিন্তা ভাবনা, কাজ কর্ম করতে পারেন, নিজ গ্রহের রহস্য ভেদ করে মঙ্গল গ্রহে পারি জমাতে পারেন? সকল সুপারকম্পিউটার আপনার ব্রেনের সামনে খেলনা পুতুল, কেনো আপনাকে সত্য ধর্ম সৃষ্টিকর্তাকে আঙ্গুলে দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে? আপনার সৃষ্টিকর্তা কেনো আপনাকে জোর করে হিদায়েত দিবেন যেখানে আপনি সবকিছু বুঝেও স্রষ্টাকে অস্বীকার করেন! পৃথিবীতে নাস্তিকরা বিলুপ্ত হচ্ছে দিন দিন, কেননা মানুষ সৃষ্টিগতভাবে বিশ্বাসপ্রিয়! বেশিরভাগ নাস্তিক শয়তানের দুই তিনটা গুতায় ধর্মকে অন্ধবিশ্বাসের কারখানা মনে করে। অথচ বিশ্বাসী হওয়ার মতো দুই তিনশত নিদর্শন সামনে পড়ে আছে সেগুলা কখনো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ভাবেই না, কখনো বোধসম্পাদন মানুষের মতো কল্পনাই করে না যে এটা কিভাবে একাই একাই সম্ভব একজন নিখুঁত শিল্পী ছাড়া!
স্যার: ঠিক আছে, ধন্যবাদ। বুঝলাম তোমার ব্যাখ্যা, তবে মুসলিমরা, আলেমরা সব সময় তোতা পাখির মতো একটা কথা বলো যে হিদায়াতের মালিক আল্লাহ্! তাহলে তোমরা মুসলিমরা কেনো এতো দাওয়াতের আজ করো, ভাই? যখন আল্লাহ্ই হিদায়েত দিয়ে থাকেন!
আমি: তা জনাব, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য পৃথিবীতে কেউ কাউকে উপদেশ দেয় না বুঝি?
বয়োজ্যেষ্ঠেরা, শিক্ষকমন্ডলীরা ছাত্রদের পরামর্শ দেন, কোন পন্থায় কোন সময়ে কোন কাজটা করবে ভালো হয় তার আদেশ দেন! সে অনুযায়ী তারা পড়াশুনা করবে কি করবে না এটা কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যপার। পড়াশুনা যে করবে সে তার পরিশ্রমের সুমিষ্ট ফলাফল ভোগ করবে, আর যে করবে না সে দুঃখিত হবে, সমাজের কাছে ফেল্টু হওয়ার জন্য লজ্জিত হবে।
আজ আমি আপনাকে ইসলামের পূর্ণ কনসেপ্ট নিয়ে দাওয়াত দিতে এসছি! আপনি গ্রহণ করবেন কি করবেন না তা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যপার। আপনি যদি আমার কথা উপলব্ধি করে ইসলাম গ্রহণ করেন, তদানুসারে আমল করেন তাহলে আপনি পরকালে এই দুনিয়ায় ইসলাম চর্চা করার জন্য পুরষ্কৃত হবেন। আর আপনি যদি না করেন তাহলে পরকালে ঘৃণিত হবেন, স্থায়ী জাহান্নামের বাসিন্দা হবেন।
যেমনটা একটা ফেল্টু ছাত্রের সাথে হয়ে থাকে কারো উপদেশ উপলব্ধি না করার! এই বলে কি ফেল্টু ছাত্রদের কেউ উপদেশ দেয় না?
আপনি যদি আমার দাওয়াতে আজ অমুসলিম থেকে মুসলিম হন, তাহলে আমি আপনার মুসলিম হওয়ার কারণ নই, আমি তো উছিলা বা মাধ্যম মাত্র, আপনার মনকে বিগলিত করেছেন, আকৃষ্ট করেছেন একমাত্র আল্লাহ্! তিনিই আপনাকে সঠিক পথে কদম ফেলার প্রকৌশলী, সেজন্য প্রকৃত পক্ষে হিদায়েতের মালিক আল্লাহ্, মানুষ নয়, মানুষ শুধু তো উপদেশ দেওনে ওয়ালা!
আর জনাব! শুনেন, যে বিজ্ঞ, সে অজ্ঞ কে পথের দিশা দেখায় না? আমরা সহ আলেম সমাজে এত জ্ঞানী হয়ে লাভ কি যদি লোকসকলের মাঝে তা বিতরণ করে দিতে না পারি? আল্লাহ্ আপনার মতো যদি ভাবতেন তাহলে, পৃথিবীতে কোনো নবী রসুল-ই পাঠাতেন না, আরশ থেকে শুধু হিদায়েতের জন্য বান্দা সিলেক্ট করতেন খালি! হুহ!
আসল কথা, আমরা দাওয়াতের কাজ করি কারণ এটি ইসলামে সর্বোত্তম, সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। আমাদের বিধাতা, আমাদের নবীজী এই কাজ করতে অতি উৎসাহিত করেছেন বলে, আমরা তাই করি! আল্লাহ্ বলেছেন,
◤"ঐ ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে।" (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত ৩৩)◢
স্যার: ওহ্! যখন এতগুলো প্রশ্নের উত্তর মোটামোটি একটা যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দিতে পারলে, তখন আর একটা প্রশ্নের উত্তর দাও, শুনি! এটা মনে হয় না কিছু বলার মতো চিপাচাপা আছে তোমার কাছে। আমাকে একটু মানবজাতির সৃষ্টির শুরুর দিকের বিষয়টা ক্লিয়ার করো দেখি।
আল্লাহ তো রুহ সৃষ্টি করার পর জানতেন ই কারা কারা জাহান্নামে যাবে। যারা যারা জাহান্নামে যাবে তাদের পৃথিবীতে পাঠানোর প্রয়োজন কি ছিলো? এটা করে তো আল্লাহ নিজেই নিজেই অসন্তুষ্টির ব্যবস্থা করলো!
আমি: অ্যাহ্, কন কি? মানে আপনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে জাহান্নামী রুহগুলো সৃষ্টি করার পর তাদের আবার ধ্বংস করে দেওয়া হোক এই জন্যই যে তারা সামনে জাহান্নামে যাবে, আল্লাহর অসন্তুষ্টির পাত্র হবে!
স্যার: হ্যাঁ, একদম তাই!
আমি: তখন যদি হবু জাহান্নামী রুহগুলো তাদের ধ্বংস করার মুহূর্তে আল্লাহর কাছে প্রশ্ন করে বসে আমাদের সৃষ্টি করেছিলেন ই বা কেনো যখন আমাদের ধ্বংস করে দিবেন কোনো ধরণের সুযোগ বা পরীক্ষা না দিয়েই?
স্যার::ওহ্! এটা তো ভাবিনি।
আমি: সীমাবদ্ধ চিন্তার অধিকারী বলেই তো আজকে নাস্তিক হইছেন, স্যার। আরও একটু চুপচাপ শুনেন, বিষয়টার কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে দেই!
স্যার: আচ্ছা।
আমি: ধরুন, একজন মা যদি জানতে পারে তার জন্ম দেওয়া সদ্য নবজাতক শিশুটি বড় হয়ে একদিন সন্ত্রাস হবে, তাহলে কি শিশুটিকে তার মা হত্যা করবে? কখনো না! তিনি শিশুটিকে সুন্দর ভাবে লালন পালন করে, নৈতিকতা এবং চারিত্রিক শিষ্ঠাচার শিক্ষা দিবেন। তাকে সঠিক পথে প্রগাঢ় ভাবে দাড়িয়ে থাকার জন্য প্রস্তুত করবেন।
তাহলে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কেনো রুহগুলোকে সুযোগ না দিয়েই ধ্বংস করে দিবেন? যেখানে এই হাদিস বলছে:
◤উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কতকগুলো বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল। তার স্তন ছিল দুধে পূর্ণ। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে কোলে তুলে নিত এবং দুধ পান করাত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেনঃ তোমরা কি মনে কর এ স্ত্রীলোকটি তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনো ফেলবে না। তারপর তিনি বললেনঃ এ স্ত্রীলোকটি তার সন্তানের উপর যতটা দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তার চেয়েও বেশি দয়ালু। (বুখারি ৫৯৯৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৬০, মুসলিম ২৭৫৪)◢
এমন এক আল্লাহ্ রুহগুলোকে ধ্বংস করে দিবেন কোনো ধরণের চান্স না দিয়েই? আল্লাহ্ তো সতর্ককারী হিসেবে নবী পাঠিয়েছেন, পাঠিয়েছন কিতাব। মাঝে মাঝে আসে তাবলীগের লোক, কানে দিনে আসে ৫ বার আজান, আসে অগণিত নিয়মিত ও অবাক বিষ্ময়ভরা মাথানষ্টা করা প্রকৃতির নিদর্শন, এতো কিছুর পরও আপনি যদি নিজের বিবেগকে প্রশ্ন না করেন, কেনো আমি অবিশ্বাসী? তাহলে বিধি রাগান্বিত হবেন না? রাগান্বিত হবেন এবং তিনি আপনার দিকে আর ফিরে তাকাবেনও না। হাশরের ময়দানে অবহেলিত এবং অপমানিত অবস্থান আপনি জাহান্নামে প্রবেশ করবেন।
শিক্ষক জানেন কোন ছাত্র পরীক্ষায় কেমন রেজাল্ট করবে, তাই বলে পরীক্ষা না নিয়েই,ছাত্রদের কি পাস ফেল করার সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়? অন্যদিকে বহু ছাত্র ফেল করবে জেনেও নিয়মিত পরীক্ষা দিতে আসে।
আর আপনি আল্লাহ্কে রুহগুলো ধ্বংস করে দিতে বলছেন?
◤"আল্লাহ্ এমন নন যে তিনি তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন, নিশ্চই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু এবং সহানুভূতিশীল।" (সূরা বাকারা, আয়াত ১৪৩) "আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করতে চান।"◢
আল্লাহ তো তাকে স্রষ্টায় বিশ্বাসী করেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলো। আপনি যদি নিজেকে পথভ্রষ্টের দিকে পরিচালিত করে তাহলে এখানে কার কি করার আছে? আল্লাহ্ তো কাউকে পরীক্ষা না করে জাহান্নামে দিবেন না। আপনি যদি জাহান্নামে যান তাহলে তার শতভাগ দায়ভার আপনার।
গাড়ি বাসস্টপে ব্রেক কষলো, আমারও বলার শেষ, আলহামদুলিল্লাহ। স্যার আমার ফোন নাম্বারটা নিলো, আগামীকাল ভার্সিটিতে গিয়ে নাকি আরো আলোচনা করবেন।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন