❒ রাতের আকাশকে কখনো অবাক মাখা হৃদয়ে তাকিয়ে দেখছেন? না পাঠক, একটু কল্পনাপ্রেমিক হয়ে তাকিয়ে দেখতে হবে! মাথায় কি কোনো কৌতূহল মাখা প্রশ্ন জাগে? মহাকাশ কতই না বড়, কত রং বেরং এর তারা দিয়ে জমকালো করে সজ্জিত! লাল, নীল কিংবা কমলা, হলুদ; কত শত হরেক রং ঢং এর তারা, নক্ষত্র দিয়ে ভরা; এর মধ্যে মাঝে মাঝে দৃষ্টিগোচর হয় আলোকউজ্জ্বল নীহারিকা, কখনোবা গ্রহাণু আবার বহু অপেক্ষার পর দ্রুতগতির ধুমকেতু! না জানি আরও কত কি আছে সেথায়! যাই হোক, আমি একটু পাঠকের সাথে সৃষ্টি জগতের বিশালতা নিয়ে আলোচনা করি! বিধাতা হবেন আমাদের শ্রোতা, কি বলেন?
ණ পৃথিবীর মানুষের নিয়ামতস্বরূপ চাঁদ, সূর্য তথা আমাদের প্রতিবেশিগুলো দিয়েই শুরু করি, যারা কোনো প্রতিদান ছাড়াই হাজার হাজার বছর ধরে আল্লাহর আদেশে আমাদের নিরাপদ ও আরামদায়ক জীবনের জন্য তাদের সাজানো পথে বিচরণ করছে। দিনের বেলা অক্লান্তহীন ভাবে আলো দেওয়া সূর্যটা পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড় এবং গত ৫০০ কোটি বছর যাবৎ এটি এভাবে আলোর ফোয়ারা দিয়ে সৌরজগৎ কে রাঙিয়ে রেখেছে। রাতের আকাশের চাঁদ মামা প্রতিনিয়ত পৃথিবীর কোনো না কোনো জায়গায় আয়নার মতো আলো প্রতিফলন করে যাচ্ছে যাতে করে পৃথিবীবাসী রাতের অন্ধকারে অসহায় হয়ে পড়ে। যদিও কৃত্রিম আলো, বাল্ব এসেছে কয়েক যুগ ধরে - তবুও বিদ্যুতের কোনো নিশ্চয়তা নেই, আল্লাহর সৃষ্টির সাথে দুই পয়সার কৃত্রিম আলোর তুলনা বৈ কি! পৃথিবীকে তমসাচ্ছন্ন থেকে রক্ষা করা চাঁদকে নিয়ে কত গল্প, কবিতা সাহিত্য।
❒ এখানে থেমে থাকলে চলবে না। আপনার কল্পনা শক্তিকে বর্ডার সীমান্তের শেষ প্রান্তে নিয়ে যান। কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছেন? কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কতগুলো বালুকণা আছে, গুণতে পারবেন? আচ্ছা, এই পৃথিবীতে কতগুলো সমুদ্র সৈকত আছে এবং সবগুলোতে মোটমাট কতগুলো বালুকণা আছে? না মানে, এর থেকেও বেশি নক্ষত্র আছে এই আমাদের এই মহাবিশ্বে, এসব নক্ষত্র বিচরণ করছে আনুমানিক ২০ হাজার কোটির অধিক গেলেক্সিতে।
ණ শুধুমাত্র আমাদের এই মিল্কিওয়ে গেলেক্সিতেই সর্বোচ্চ ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র আছে। এই গেলেক্সির আয়তন প্রায় এক লক্ষ আলোকবর্ষ। BMW গাড়িতে করেও যদি মিল্কিওয়ে গেলেক্সি পারি দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তাতেও দুই লক্ষ কোটি বছরের বেশিরের বেশি সময় পার হয়ে যাবে। আর আলোর গতিতে গেলেও সম্ভব না, কারণ আলোরও এক লক্ষ বছর লেগে যায় মিল্কিওয়ে গেলেক্সি এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে। এতদিন বাঁচবেন নাকি?
❒ যাগ্গে, অনেক হয়েছে সংখ্যাতাত্ত্বিক আলোচনা, এখন প্রশ্ন করার পালা, তা ভাই এই সুবিশাল মহাবিশ্ব কোথা থেকে আসলো? কিভাবেই বা শুরুটা হয়েছিলো? হুট করেই এসেছিল নাকি প্রক্রিয়াজাত করার কিছু, ধাপ ধাপ সিস্টেম ছিলো? আল্লাহর সৃষ্টি বলে কথা!
[1]
ණ হ্যাঁ, আলোচনা করা যাক পৃথিবী নামক গ্রহের সবচেয়ে মেধাবী ও তাগড়া বিজ্ঞানীদের কাছে সবচেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং অধিক গ্রহণযোগ্য বিগ ব্যাং থিউরি নিয়ে। তেরোশত সাতাত্তর কোটি বছর আগের ঘটনা, যখন মহাবিশ্ব ছিলো একটি বিন্দু মাত্র, এতই ছোট যে মানব চক্ষুর দেখার অযোগ্য। না মানে পাঠক, এর থেকেও ক্ষুদ্র, একবারে পরমাণুর থেকেও ছোট একটি অবস্থা যা ছিলো আমাদের এই বর্তমান মহাবিশ্বের সূচনালগ্ন। আমার মাথায় এখনো এই বিষয়টা এখনো খেলে না, কিভাবে একটা বিন্দুর মাঝে ৭ আসমান জমিন চাপিয়ে রাখা সম্ভব! পুরো মানবজাতি চেষ্টা করে এক গ্লাস পানিকে একটা বিন্দু পরিমাণ জায়গায় আবদ্ধ করে রাখতে পারবে? কখনো না, সেই আল্লাহ এটা করে দেখিয়েছেন তাও সবকিছুকে একটি বিন্দুতে ওতপ্রোতভাবে মিশিয়ে। সেজন্য মাঝে মাঝে অন্তরের গহীন থেকে ইমানদীপ্ত, বিশ্বাসভরা একটা কথা উথলিয়ে উঠে, আমার আল্লাহ্ সকল অক্ষমতা থেকে পবিত্র!
ණ বিগ ব্যাং এর কথায় ফিরে আসি। বিন্দুটার তাপমাত্রা মাপার মতো কোনো পদ্ধতি নেই, ভর মাপার মতো কোনো যন্ত্র নেই। বলতে গেলে অসীম তাপমাত্রা এবং অসীম ভরের এই বিন্দুটি এক মহাবিষ্ফোরণ এর জন্য তার রবের হুকুমের অপেক্ষা করছিলো মাত্র। বিন্দুটার ভিতর আল্লাহ নির্দিষ্ট পরিমাণে সকল মাল মসলা ঢেলে রেখেছিলেন। আল্লাহ যেই বললেন কুন, সেই ওমনি কোনো কথা ছাড়াই তার ভিতরের সবকিছু এক মহাবিষ্ফোরণ এর মাধ্যমে মহাকশে ছড়িয়ে দিলো। সকল পদার্থ, মাধ্যাকর্ষণের চাদর, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি সব নিজের নাম, পরিচয় এবং অস্তিত্ব পেলো। মজার ব্যাপার হলো ওটার ভিতর আমার আপনার শরীরের সকল পদার্থগুলোও ছিলো।
❒ এতো মজাদার এই ঘটনাটা, আমাদের সৃষ্টির ইতিহাস বটে! আর এসব কোরআনে থাকবে না, তা হয় নাকি? আল্লাহ বলেন:
➤ "যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীন ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম।" (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩০) (অনুবাদ: আল-বায়ান)
ණ আর্নো পেনজিয়াছ এবং রবার্ট উইলসন নামের দুজন জ্যার্তিবিজ্ঞানী ১৯৬৫ সালে এক্সিডেন্টালী বিগ ব্যাং থিউরির আইডিয়া পান, নামকরণ করেন এবং ইতিহাসে মহাবিশ্বকে জানার আরেকটি অধ্যায় শুরু হয়। ঘটনা ছিলো এমন যে, টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশে পর্যালোচনা চালাচ্ছিলেন অন্য একটি উদ্দেশ্যে নিয়ে, কিন্তু বিগ ব্যাং এর ধ্বংসাবশেষের রেডিয়েশন দেখে মাথায় আইডিয়া আসলো আরেক নতুন আবিষ্কারের। ফলাফলসরূপ তারা বিগ ব্যাং থিউরি আবিষ্কার করার জন্য স্বনামধন্য হয়ে যান। এতো বড় একটি আবিষ্কার, যা সম্ভব হয়েছিলো টেলিস্কোপ দিয়ে CMR ডিটেক্ট করার জন্য (FULL MEANING: COSMIC BACKGROUND MICROWAVE RADIATION) ফলাফলসরূপ CMR আবিষ্কার করার জন্য তারা দুজনেই যৌথভাবে পেয়ে গেলেন নোবেল পুরষ্কার। তাম্র ফলক খুঁজতে গিয়ে স্বর্ণখনি পাওয়ার মতো একটা ঘটনা আর কি!
ড:মিলার নামের একজন বিজ্ঞানী বলেছেন, এই আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পর কোরআন যে ঐশী গ্রন্থ তা মেনে নিতে বাধ্য হই। যারা প্রচার চালাচ্ছে কোরআন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিজস্ব বক্তব্য তাদের দাবি নাকচ করার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।
[2]
এই মহাবিশ্বকে তো আল্লাহ অস্তিত্বে আনলো। কিন্তু বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ, বিজ্ঞানী মনে করতো মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে আছে, এর কোনো শুরু নেই, শেষ নেই। মহাবিশ্ব অসীম, কোনো প্রান্ত নেই, কুলকিনারাও নেই। কিন্তু বর্তমান আধুনিক জ্যার্তিবিজ্ঞান এর কাছে এটি একটি কুসংস্কার মাত্র, সবাই একবাক্য স্বীকার করে, বিগ ব্যাং এর আগে মহাবিশ্ব ছিলো না, অনিস্তত্ব থেকে অস্তিত্বে। কোরআন এ কথার স্বীকৃতি দেয় সাড়ে চৌদ্দশ্য বছর আগেই।
➤ "তিনি (আল্লাহ্) আসমান ও জমিনকে অনিস্তত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী, তিনি যখন কিছু করতে চান তখন সেটিকে বলেন, 'হও', অমনি তা হয়ে যায়।" (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১১৭)"
[3]
বিগ ব্যাং এর বিষ্ফোরণ তো হলো, তা এটা কেমন বড় বিষ্ফোরণ ছিলো? জাপানের হিরোসীমা আর নাগাসাকি তে ফেলা বোমের মতো? না না, তা হয় নাকি! বিষ্ফোরিত হওয়ার এক সেকেন্ডের মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময় এটা আমাদের মিল্কিওয়ে গেলেক্সির থেকেও বড় আকার ধারণ করে। চোখ ধাঁধানো বিষয় হলো আমাদের মিল্কিওয়ে গেলেক্সি 1,000,000,000,000,000,000 কিলোমিটার থেকেও বড়।
সেই যে এই মহাসম্প্রসার শুরু হয়েছে তা আজ পর্যন্তও থামে নি। যতদিন এই আসমান জমিন থাকবে এই সম্প্রসারণ চালু থাকবে। এমনকি আলোর গতির থেকেও এর সম্প্রসারণ গতি বেশি দ্রুতগামী। সেজন্যই আল্লাহ কোরআন মাজিদে চ্যালেঞ্জ করেছেন,
➤ "হে জিন ও মানুষ জাতি! তোমরা যদি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা অতিক্রম করতে পার, তাহলে অতিক্রম কর; কিন্তু তোমরা তা পারবেনা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত।" (সূরা আর রহমান, আয়াত ৩৩)
মহাবিশ্বের বয়স ১৩ শত ৭৭ কোটি বছর। কিন্তু মহাবিশ্বের আয়তন ৯ হাজার ৩ শত কোটি আলোকবর্ষ। সকল বিজ্ঞানীরা একমত, আমরা কোনো দিন কোনোভাবেই ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পারি দিয়ে, আলোর গতিকে টেক্কা দিয়ে এই মহাবিশ্ব ভেদ করে বেরিয়ে যেতে পারবে না। মানবজাতির সীমাবদ্ধতা এটি।
❒ যাই হোক, সালটি ছিলো ১৯২২, সোভিয়েত ইউনিয়নের এক বিজ্ঞানী, নাম আলেকজান্ডার ফ্রেডম্যান। ইনিই সর্বপ্রথম প্রস্তাবনা দেন মহাবিশ্ব যে প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর পর জর্জ লিমেট্র অনেকটা স্পষ্ট ধারণা নিয়ে তার ১৯২৫ সালে সর্বদা সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের তাত্ত্বিক তথ্য প্রদান করেন। কিন্তু এগুলো সব গাণিতিক সমীকরণ দ্বারা প্রমাণিত ছিলো। সব জল্পনাকল্পনা থেকে বেরিয়ে এডউইন হাবল ১৯২৯ সালে তার 100 ইঞ্চি টেলিস্কোপ দিয়ে হাতে কলমে প্রমাণ করে দেখালেন, মহাবিশ্ব একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, মহাবিশ্ব সবদিক থেকে সম্প্রসারিত হচ্ছে, অনেকটা বেলুন ফুলানোর মতো! কোরআন তো এসব থিউরি বা তত্ত্ব, রিসার্চ পেপার কিংবা গাণিতিক সমীকরণ, কোনোকিছুর ই তোয়াক্কা করে না, দশ কথার কথা এক কথায় বলে দেয়! কি, কেনো, কিভাবে তার সবচেয়ে সুন্দর সমাধান। আল্লাহ বলেন,
➤ "আমি আমার ক্ষমতা বলে আসমান সৃষ্টি করেছি এবং আমি নিশ্চই মহাসম্প্রসারণ কারী।" (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ৪৭)
[4]
বিগ ব্যাং তো হলো, এরপর সম্প্রসারিত হওয়ার বিষয়টাও গেলো। এর পর কি হইছিলো, ভাই? বিষ্ফোরণ, সম্প্রসারণ এরপরই সব একাই একাই হয়ে গেলো? মোটেও না। বিগ ব্যাং এর পর সব কিছু ছিলো নেবুলা, তা নেবুলা কি? ধোঁয়া বা গ্যাসের বিরাট মেঘ। আরও বললে, নেবুলা হলো ধোয়া যা হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও লিথিয়াম এর মিশ্রণ । যা এলোপাথাড়ি মহাবিশ্বে বিচরণ করছিলো উদ্দেশ্যহীন ভাবে, তারপর একদা আল্লাহর হুকুম এলো।
➤ "অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধোঁয়া বিশেষ। অতঃপর তিনি ওকে (আকাশকে) ও পৃথিবীকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে মিলিত হও ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়।’ ওরা বলল, ‘আমরা তো অনুগত হয়ে আসলাম।" (সূরা হা-মীম আস-সাজদা অথবা ফুসসিলাত, আয়াত ১১)
আয়াতটি দুখান (ধোঁয়া) শব্দটি আছে, যা দ্বারা পুরোপুরি গ্যাস বুঝায় না, বুঝায় ধোঁয়া, আর আজকের বিজ্ঞানীরা বলেন, সেই সময়ের জন্য গ্যাসের তুলনায় ধোঁয়া থাকাই বেশি যুক্তিযুক্ত। কারণ সে সময়ের তাপমাত্রা অনেক অনেক বেশি ছিলো যা বাষ্প থাকার অযোগ্য।
প্রথম এক সেকেন্ডেও মহাবিশ্ব ছিল যেন জ্বলন্ত এক নিউক্লিয় চুল্লি। তাপমাত্রা ছিল একশ কোটি ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের চেয়েও বেশি। সেসময় কোন চেনা জানা কণা ছিল না, চারদিক পূর্ণ ছিল কেবল প্লাজমার ধোঁয়াশায়। এক সেকেন্ড পরে কোয়ার্ক, ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের মত মৌলিক কণিকাগুলি তৈরি হয়। তিন সেকেন্ড পরে প্রোটন আর নিউট্রন মিলে তৈরি হল নিউক্লিয়াস, এর পরে যথাক্রমে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, লিথিয়ামের গ্যাসে আচ্ছাদিত হয়। পড়ে মাধ্যাকর্ষণের টানে বড় বড় নক্ষত্র তারা তৈরী হয়।
যাই হোক, আচ্ছা মহাবিশ্বে সবকিছু ভেসে থাকে কেনো? কোনো কিছু নিচে পড়ে যায় না, সবকিছুই ভাসে। অদ্ভুত প্রশ্ন, কিন্তু কারণ কি? আল্লাহ বলছেন- “তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলিকে উচুতে স্থাপন করেছেন কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ ছাড়া, যা তোমরা বুঝতে পারবে। (সূরা রাদ:২)
❒ আমাদের বিজ্ঞান আজ জানিয়েছে আকাশমন্ডলির কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ নেই। এর আছে একটি অদৃশ্য স্তম্ভ-মধ্যাকর্ষন শক্তি তথা গ্রেভেটেশনাল ফিল্ড আছে!
[5]
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তা তো পর্যায়ক্রমে বলে দিলেন, মহাবিশ্ব কিভাবে ধ্বংস হবে সেটা বলবেন না? হ্যাঁ, এটাও আছে ভাই। যেহেতু আল্লাহ বলেছেন, "আমি কোনো কিছুই এ কিতাবে (কোরআনে) লিখতে ছাড়িনি।" (সূরা আন-আম, আয়াত ৩৮)
❒ মহাবিশ্ব ধ্বংস হওয়ার তিনটি থিউরি দিয়ে থাকেন বিজ্ঞানীরা। সেগুলো হলো: বিগ রিপ, বিগ ফ্রিজ, বিগ ক্রাঞ্চ।
• বিজ্ঞানীদের ধারণা, বিগ রিপ হতে পারে ডার্ক এনার্জির অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলে। মহাবিশ্বের বয়স যত বাড়ছে ডার্ক এনার্জি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। যেকোনো সময় ডার্ক এনার্জির আধিক্যে মহাবিশ্ব গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যেতে পারে। যদিও এটি বিজ্ঞান মহলে ওতটা গ্রহণযোগ্যতা প্রকাশ পায় নি।
• বিগ ফ্রিজ হলো এমন একটি সময় যখন মহাবিশ্বের সকল নক্ষত্রের জ্বালানি ফুরিয়ে যাবে। মহাবিশ্ব অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং সর্বোচ্চ ঠান্ডা, হিমায়িত পর্যায়ে চলে যাবে। সবকিছু মলিন হয়ে যাবে, এমন কি পদার্থ পর্যন্ত তার সক্রিয়তা হারিয়ে ফেলবে কালের বিবর্তনে। কিন্তু এই থিউর বাস্তবায়িত হতে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে যাবে।
• বিগ ক্রাঞ্চ হলো সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য থিউরি। এটি বলছে, মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে, যেকোনো সময় এর সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে আবার রিভার্স করতে পারে। মানে যেই অবস্থা থেকে শুরু হয়েছিলো, সেই অবস্থায় ফিরে এসে আবার বিন্দুতে পরিণত হবে। অনেকটা একটা খবরের কাগজের ভাজগুলো খুলে আবার হাত দিয়ে মুড়িয়ে ফেলার মতো। এটি আমাদের কোরআন শরীফের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আল্লাহ বলেন:
➤ "সেদিন (কিয়ামতের দিন) আমরা আসমানসমূহকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর।" (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৪)
❒ লিখার যেকোনো অংশ সন্দেহ লাগলে, কমেন্টে জানান। প্রথম কমেন্টে রেফারেন্স গুলো যুক্ত করা হবে। লিখাগুলো ১২-১৪ ঘন্টার টাইপিং এবং বহু দিনের পড়াশুনার ফলাফল। পাঠকের ভালো সারা পেলে সিরিজটি চালু রাখবো, ইনসাআল্লাহ। আপনাদের ঈমান দৃঢ় করার উদ্দেশ্য সমানে রেখেই এত কষ্ট করে লিখা হয়, আপনারা পড়বেন, নতুন কিছু জানবেন, অন্যদের জানাবেন, আল্লাহ এই দৃশ্য দেখে সবার উপর সন্তুষ্ট হবেন, এটাই তো মুমিন মুসলিমের দুনিয়ার তাকওয়ামাখা বিধাতার পছন্দের দৃশ্য।
পাঠক: جــــــــــــــــــزك اللــــــــــــــــــــه خيـــــــــــــــــــــر

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন